সারা দেশে নেতাদের ডাটাবেজ তৈরি করছে বিএনপি। আপাতত বিএনপির পাশাপাশি যুবদল ও ছাত্রদলের সব ইউনিটের ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের এর আওতায় আনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকি অঙ্গসংগঠন ও কমিটির নেতাদের ডাটা বেজ তৈরি করা হবে। প্রত্যেক নেতার ছবিসহ নাম পরিচয়, মোবাইল নাম্বার, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকবে ডাটাবেজে। বিএনপি রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনআরসি) অধীনে ডাটাবেজ তৈরির জন্য একটি প্রাইভেটে আইটি ফার্মকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ফার্মের কর্মীরা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে বসে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের সেতুবন্ধন তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডাটাবেজ তৈরি করা হলে কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত তৃণমূলে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এছাড়া কারও ব্যাপারে কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন হলে সহজেই তা পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, বেশ কিছু দিন আগে ডাটা বেইজ তৈরির সিদ্ধান্ত হলেও নানা কারণে তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, তৃণমূল নেতাদের তথ্য না থাকায় অনেক সময় কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে জানানো সম্ভব হয় না। দফতরের মাধ্যমে চিঠি বা ফোন করে ওই সিদ্ধান্ত জানাতে বিলম্ব হয়। তাছাড়া হাজার হাজার নেতাকে ফোন করাও সম্ভব নয়। আবার অনেককে ফোনে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না। গুরুত্বপূর্ণ বা গোপনীয় কোনো তথ্য চিঠির মাধ্যমে পাঠানো হলে তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডাটা বেইজ থাকলে কেন্দ্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেতাদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা বা ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো সম্ভব হবে। এছাড়া কোনো নেতা সম্পর্কে তথ্য জানার প্রয়োজন হলে ডাটা বেইজ থেকেই সংগ্রহ করা যাবে।
এমন চিন্তাভাবনা থেকেই সম্প্রতি দ্রুত ডাটা বেইজ তৈরি করতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নির্দেশ দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার নির্দেশের পর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ কয়েক নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন মির্জা ফখরুল। কীভাবে কাজটি দ্রুত করা যায় সে ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চাওয়া হয়। কাজটি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে শেষ করতে প্রাইভেট আইটি ফার্মকে দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তারা। এরপর একটি আইটি ফার্মকে পুরো কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়।
সুমাইয়া আক্তার নামে ফার্মের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি মহাসচিবের তত্ত্বাবধানে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে তথ্য চেয়ে নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা টেলিফোনেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তৃণমূল থেকেও ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই ই-মেইলে তাদের তথ্য পাঠাচ্ছেন। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সব জেলা ও মহানগর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, তৃণমূল তথা ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলে কমিটিগুলোর শীর্ষ পাঁচ (সুপার ফাইভ) পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ব্যক্তিগত তথ্যসংবলিত একটি ডাটা বেইজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিএনআরসির একটি টিম আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্যগুলো [email protected] এই ঠিকানায়ও সরাসরি পাঠাতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র তৃণমূল নেতাদের ডাটা বেইজ তৈরির কাজ করছে বলে শুনেছি। তথ্য পাঠাতে মহাসচিব চিঠিও পাঠিয়েছেন। তবে এখনও চিঠি হাতে পাইনি। পেলে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তা দ্রুত পাঠিয়ে দেব।’
পাঠকের মতামত